কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পশ্চিম তীরে স্থাপিত প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে ২২৩ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে সরকার।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের এক বৈঠকে দেশের আরো ১০টি প্রকল্প সহ কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটের উন্নয়নে ‘ইমপ্রুভমেন্ট অব ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার অব বাংলাদেশ ফিশারিস ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন ইন কক্সবাজার ডিস্ট্রিক্ট’ শীর্ষক প্রকল্পটিরও অনুমোদন দেওয়া হয়।
মূলত প্রকল্পটি কক্সবাজার জেলার বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের অবতরণ ব্যবস্থাপনা কার্যকর করে তোলা, মাছ ব্যবস্থাপনা ও মাছ ধরার ক্ষেত্রে অবতরণ অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের উন্নয়নের পাশাপাশি জেলেদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্প্রতি ২ হাজার ২৯৪ মিলিয়ন জাপানি ইয়েনের (প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা) গ্র্যান্ট চুক্তি করেছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। গত বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে এ চুক্তি সম্পাদিত হয়।
চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন জাইকা বাংলাদেশের চিফ রিপ্রেজেন্টেন্টিভ ইচিগুচি তোমাহিদে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি; বিএফডিসি’র চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর এবং জাইকা, ইআরডি, বিএফডিসি ও জাপানের দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বিএফডিসি সূত্রে জানা যায়, এই প্রকল্পের আওতায় স্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ এবং কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা উন্নতিকরণ করা হবে। এর ফলে নৌকার মালিক, জেলে, পরিবেশক এবং শ্রমিকসহ প্রতিদিন ২ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এবং চট্টগ্রাম ও ঢাকার মাছ বাজারের ২ লক্ষ মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ১৪৯ বর্গমিটার বিশিষ্ট ৩ তলা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ভবন নির্মাণ, ১৯৫ বর্গমিটার ব্যবসায়ীদের অফিস ঘর নির্মাণ, ২ সেট পন্টুন এবং গ্যাংওয়ে (ব্রিজ, র্যা ম্প, পিয়ার, অ্যাঙ্কর ব্লক ইত্যাদি) স্থাপন, ৩ হাজার ১৭৬ দশমিক ৬৯ বর্গমিটার রিভেটমেন্ট বা ঢালু পথ নির্মাণ, ৭১৪ দশমিক ৬০ বর্গমিটার মাছের বাজার এবং প্রার্থনা কক্ষ নির্মাণ এবং নির্মাণ সময়কালে মাছ অবতরণের জন্য ১ হাজার ৪৫৭ দশমিক ৩ বর্গমিটার অস্থায়ী একটি ইস্পাত কাঠামো শেড নির্মাণ করা হবে। এছাড়া মাছ তোলা ও বহনের জন্য ২ হাজার ১৪১ পিস সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) চেয়ারম্যান সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার জানান, কক্সবাজার জেলার প্রায় ৮৫% ভাগ মাছ কক্সবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটে অবতরণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটির অবস্থা বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। নাব্যতাও ঠিক নেই। প্রকল্পটির অধীনে একটি আধুনিক মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলা হবে কক্সবাজারকে। এই প্রকল্পের আওতায় মৎস্যজীবীদের জন্যও উন্নত কাজের পরিবেশ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি মানসম্পন্ন মাছ সংগ্রহ এবং সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দরিদ্র জেলে ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের জীবনমাণ উন্নত হবে।
তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পর প্রতিদিন ৪০টি অতিরিক্ত নৌকা অবতরণ করতে পারবে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি বছরে মৎস্য অবতরণের পরিমাণ ১০ হাজার মেট্রিক টন এবং বরফ উৎপাদনের পরিমাণ ৬ হাজার ৩শ মেট্রিক টনে উন্নীত করা হবে।
পাঠকের মতামত